`কারাগারের রোজনামচা’ গ্রন্থটির ‘ বন্দুক দফা’ বলতে কোন ধরনের কায়েদিদের বোঝানো হয়েছে?

`কারাগারের রোজনামচা’ গ্রন্থটির ‘ বন্দুক দফা’ বলতে কোন ধরনের কায়েদিদের বোঝানো হয়েছে? সঠিক উত্তর মেথর

পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সাত মাসের মাথায় ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্বদানের অভিযোগে ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেপ্তার হন। বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে বাঙালির ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য বহু বছর পাকিস্তানের কারাগারে কাটাতে হয়। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ, প্রথম সেনাবাহিনী তাঁকে গ্রেপ্তার করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যায়। সামরিক আদালত তাঁকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে। ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয়ের পর ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি পাকিস্তান সরকার বৈশ্বিক চাপের মুখে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দেয়। ছয় দফা আন্দোলনে ও আগরতলা মামলায় গ্রেপ্তারের পর ১৯৬৬ সালের ২ জুন থেকে ১৯৬৭ সালের ২২ জুন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় কারাগারে এবং ১৯৬৮ সালের ১৮ জানুয়ারি থেকে ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কুর্মিটোলা সেনানিবাসে অফিসার মেসে বঙ্গবন্ধুর অন্তরীণ থাকাকালীন দিনলিপির বিবরণ নিয়েই ‘কারাগারের রোজনামচা’ লেখা হয়েছে। এটি বঙ্গবন্ধুর লেখা দ্বিতীয় রচনা। বাংলা একাডেমি কর্তৃক এটি প্রকাশিত হয়েছে গত মার্চে। শুরুতে নাতিদীর্ঘ ভূমিকা লিখেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। পাঠকের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ ভূমিকাটি বেশ সহায়ক হয়েছে। সঙ্গত কারণে রোজনামচা জেলজীবনের খুঁটিনাটি নানা বিষয় আলোচিত হয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, এই গ্রন্থে সমকালীন পাকিস্তানের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক অবস্থা বঙ্গবন্ধুর পারিবারিক জীবনের অনেক ঘটনা বস্তুনিষ্ঠ, প্রাঞ্জল ও নৈর্ব্যক্তিকভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। ‘থালা - বাটি কম্বল, জেলখানার সম্বল’রোজনামচায় যাওয়ার পূর্বে ‘থালা - বাটি কম্বল, জেলখানার সম্বল’ শীর্ষক অংশে বঙ্গবন্ধু অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী ভাষায় জেলখানার নানা নিয়মকানুন আলোচনা করেছেন। সাধারণত জেলখানার অভ্যন্তরের বিষয় সাধারণ পাঠকের জানার সুযোগ থাকে না। “জেলে যারা যায় নাই, জেল যারা খাটে নাই তারা জানে না জেল কী জিনিস। বাইরে থেকে মানুষের যে ধারণা জেল সম্বন্ধে ভিতরে তার একদম উল্টা।… জেলের ভিতর অনেক ছোট ছোট জেল আছে।” বঙ্গবন্ধু এভাবেই শুরু করেছেন জেলের ভেতরে কয়েদিদের নানা দায় - দায়িত্বের বিবরণ। যেমন, রাইটার দফা, চৌকি দফা, জলভরি দফা, ঝাড়ু দফা, বন্দুক দফা, পাগল দফা, দরজি খাতা, মুচি খাতা ইত্যাদি। এই অধ্যায়ে বঙ্গবন্ধু ইংরেজ ও পাকিস্তান আমলে রাজবন্দিদের সুযোগ - সুবিধার তুলনামূলক আলোচনা করেছেন। তাঁর মতে, ইংরেজ আমলে খাবার ও থাকার ব্যবস্থা ভালো ছিল। জেলখানার হাসপাতালের চিকিৎসার মান নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা আছে। ভালো, মন্দ দুই ধরনের দৃষ্টান্তের উল্লেখ করেছেন। বন্দিরা সপ্তাহে একটি চিঠি আর ১৫ দিনে একবার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারত। কিন্তু সেখানেও বাধা - নিষেধ ছিল। গোয়েন্দা দপ্তরের কর্মচারীদের পড়ার পর চিঠি হাতে পাওয়া যেত, সাক্ষাতের সময় গোয়েন্দা ও জেলের কর্মচারীরা উপস্থিত থাকত। বঙ্গবন্ধু দুঃখ করে লিখেছেন: “নিষ্ঠুর কর্মচারীরা বোঝে না যে স্ত্রীর সাথে দেখা হলে আর কিছু না হউক একটা চুমু দিতে অনেকেরই ইচ্ছ হয়, কিন্তু উপায় কী? আমরা তো পশ্চিমা সভ্যতায় মানুষ হই নাই। তারা তো চুমুটাকে দোষণীয় মনে করে না। স্ত্রী সাথে স্বামীর অনেক কথা থাকে কিন্তু বলার উপায় নাই।” এই অধ্যায়ে আরও কিছু বিষয়ের অবতারণা করেছেন। জেল - জীবনের শুরু থেকেই সিপাহি, কয়েদিদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর বেশ আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে উঠে ছিল। যে কারণে সবাই তাঁর সঙ্গে সৌজন্যপূর্ণ আচরণ করেছে। তিনিও জেলের আইন মেনে চলতেন, তবে সাধারণ কয়েদিদের সঙ্গে জেল কর্তৃপক্ষের অন্যায় আচরণের প্রতিবাদ করতেন। সাধারণ মানুষকে বঙ্গবন্ধু সব সময় দেখেছেন মমতা ও সহানুভূতির চোখে, লুদু ওরফে লুৎফর রহমানের প্রতি তিনি যে স্নেহ দেখিয়েছেন, তা এককথায় নজিরবিহীন। তথাকথিত ভদ্রলোকেরা লুদুদের সঙ্গে কথাও বলবেন না। কারণ লুদু একজন পেশাদার চোর। লুদুর সঙ্গে বঙ্গবন্ধু যে সদয় আচরণ করেছেন তাতে মনে হয়েছে ‘অপরাধকে ঘৃণা কর, অপরাধীকে নয়’– তিনি আক্ষরিক অর্থে তা বিশ্বাস করতেন। কেন একজন সাধারণ চোরের সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। এ বিষয়ে তিনি লিখেছেন: “আমি লিখছি এর জীবনের ঘটনা থেকে পাওয়া যাবে আমাদের সমাজব্যবস্থার চিত্র, মনুষ্যচরিত্র সম্বন্ধে, যারা গভীরভাবে দেখতে চেষ্টা করবেন। তারা বুঝতে পারবেন আমাদের সমাজের দুরবস্থা এবং অব্যবস্থায় পড়েই মানুষ চোর ডাকাত পকেটমার হয়। আল্লাহ কোনো মানুষকে চোর ডাকাত করে সৃষ্টি করে না।” বাঙালির স্বাধিকার অর্জনের ইতিহাসে ছয় দফা আন্দোলন একটি অসামান্য দিক পরিবর্তকারী ঘটনা। ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধী দলীয় কনভেনশনে ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেন। উল্লেখ্য, ২৬ বছর পূর্বে আরেক বাঙালি শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক লাহোর প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন। লাহোর প্রস্তাব যেমন গৃহীত হয়েছে, ছয় দফা তেমনি প্রত্যাখাত হয়েছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করতেন ছয় দফা হল বাঙালির বাঁচার দাবি। তাই ছয় দফার পক্ষে জনমত গঠনে জানপ্রাণ দিয়ে নেমে পড়লেন।
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

বিসিএস, ব্যাংক, প্রাইমারি সহ সরকারি বেসরকারি চাকুরীর পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ

Related MCQ's

'কারাগারের রোজনামচা' গ্রন্থটির লেখক কে?

‘কারাগারের রোজনামচা’ গ্রন্থটির প্রকাশক-

‘কারাগারের রোজনামচা’ গ্রন্থটির রচয়িতা কে?

`কারাগারের রোজনামচা’ গ্রন্থটির লেখক কে?

কারাগারের রোজনামচা গ্রন্থটির লেখক কে?

শেখ মুজিবুর রহমানের কারাগারের ‘রোজনামচা' গ্রন্থটির নাম দেন কে?

'কারাগারের রোজনামচা' গ্রন্থটির রচয়িতা কে?

"কারাগারের রোজনামচা" গ্রন্থটির রচয়িতা কে?